238888

বিশ্বকাপের বিদায়ী ম্যাচ খেলছেন এক মহানায়ক

অনলাইন সংস্করণঃ- গতকাল বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন ‘দ্য ইউনিভার্স বস’ খ্যাত ক্রিস গেইল। আজ আরও এক মহানায়ক নিজের বিদায়ী ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপের অভিযান শেষ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের মহানায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যদিও বিদায়ের পর্বটা ভালো হলো না বাংলাদেশ টাইগার ক্যাপ্টেনের।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে সৈন্যদের দিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে পা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছিল না বাংলাদেশের। বাজে ফিল্ডিং, বৃষ্টিতে পয়েন্ট নষ্ট, জয়ের কাছে গিয়েও হেরে যাওয়া- দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছুই নয়। তাই সংবাদ সম্মেলনে প্রায়ই মাশরাফি বলে থাকেন, ‘ভাগ্য অনেক বড় ফ্যাক্টর। আপনি যতই ভালো খেলুন না কেন, ভাগ্যের সহায় থাকতে হয়।’ কিন্তু আজ তো অন্তত ভাগ্যের সহায় মনে প্রাণে চাইতেন পারেন মাশরাফি। কারন এটিই বাংলাদেশ অধিনায়কের বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ।

বয়স- ৩৬ ছুই-ছুই। আগামী বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে। সেখানে মাশরাফির খেলা অবাস্তব চিন্তা। সেটি নিজেও জানেন মাশরাফি। তাই দেশ ছাড়ার আগে ও ইংল্যান্ডে এসেও বলেছেন- এবারের আসরই আমার শেষ বিশ্বকাপ। মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপটা রঙ্গিন হলো না। তবে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটা রঙ্গিন করতে মুখিয়ে থাকবেন মাশরাফি।

বিশ্বকাপে সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না মাশরাফি। দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে এখন পর্যন্ত ৭ ইনিংসে বল করে মাত্র ১ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। ৪৯ ওভার বল করে ৬.৪২ ইকোনমি রেটে ৩১৫ রান দিয়েছেন। এমন পারফরমেন্সে মাশরাফি নিজেও হতাশ। খারাপ লাগছে ভক্তদেরও। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরাফিকে নিয়ে হাহা-কার তাদের।

তবে যারা সমালোচনাতে পটু, তারা ঠিকই তাদের কাজটি করেছেন। মাশরাফিকে নিয়ে সমালোচনা করতে ভুল করেননি। তারা হয়তো ভুলে গেছেন, পায়ে সাতটি অস্ত্রোপচার নিয়ে এখনও ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তিনি। অধিনায়কত্ব, বোলিং দিয়ে দলকে সেরা অবস্থানে আনতে বড় ভূমিকা ছিল গত ৩০ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মাশরাফির।

২০১৪ সালের শেষেরদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট যখন টালমাটাল অবস্থা তখনই দলের দায়িত্ব নেন মাশরাফি। বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে জিম্বাবুুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক হন তিনি। দায়িত্ব নিয়ে দলকে পাল্টে দেন মাশরাফি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজের সবগুলোতেই জয় পায় বাংলাদেশ। এই সাফল্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপের এগারতম আসরে খেলতে নামে টাইগাররা।

সে আসরে বড় কোনো লক্ষ্য ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু মাশরাফি নেতৃত্বে বিশ্বকাপের মঞ্চে সেরা সাফল্যই পায় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনালে প্রথমবারের মতো খেলে টাইগাররা। শেষ আট থেকে বিদায় নিলেও, থেমে যায়নি বাংলাদেশের পথ চলা। মাশরাফির নেতৃত্বে এরপর ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে নাকানিচুবানি দেয় বাংলাদেশ। এইসব সাফল্যে আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে ৭ নম্বরে উঠে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সরাসরি খেলার সুযোগ পায়। সেখানেও ছিল চমক। দলের খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত পারফরমেন্স, মাশরাফির বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তোলে।

বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাফল্যে বাংলাদেশকে আরও বড় স্বপ্ন দেখান মাশরাফি। দ্বাদশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার পণ করে ইংল্যান্ডে আসেন তিনি। কিন্তু ঐ যে ভাগ্য সহায় হয়নি দলের। ভাগ্য সহায় হয়নি মাশরাফির। নয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বিশ্বকাপের মঞ্চে মাত্র ১টি উইকেট পাবেন, বেমানানই বটে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামেন মাশরাফি। ৯ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে প্রধান ভূমিকা ছিল মাশরাফির। ৯ দশমিক ৩ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা মাশরাফি, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ মিস করেন। দেশের মাটিতে ঐ বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষনার এক মাস আগে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় আবারো হাটুঁর ইনজুরিতে পড়েন তিনি। তাই মাশরাফিকে ছাড়াই দেশের মাটিতেই বিশ্বকাপ খেলতে হয় বাংলাদেশকে।

তবে অধিনায়ক হিসেবে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছেন মাশরাফি। ৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন দলের নেতা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর আজ ম্যাচ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ৭২ ম্যাচে ৭৬ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। দ্বিতীয়বার অধিনায়ক হওয়ার পর নেতা হিসেবেও বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন বড় বড় সাফল্য। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা অধিনায়ক বনে যান মাশরাফি। ৮৪ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ৪৭টি জয় পেয়েছেন তিনি। হার ৩৫টি।

 

সূত্র কালেরকণ্ঠঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.