231934

“একটি জুটি আজ সবার মুখে মুখে”

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। সংবাদ পাঠিকা থেকে হয়েছেন পুরোদস্তুর নায়িকা। ২০১৬ সালে ‘বসগিরি’ ছবিতে অভিনয় করে রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে এ নায়িকার। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত এ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। তারপর শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন আরও ছয়টি ছবিতে। ঈদে মুক্তি পাচ্ছে এ জুটির অষ্টম ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। মালেক আফসারি পরিচালিত এ ছবিটি নির্মিত হয়েছে এসকে ফিল্মসের ব্যানারে। যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন শাকিব খান ও মোহাম্মদ ইকবাল। বুবলীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ শেষে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি নিয়ে লিখেছেন আল কাছির
‘ঈদে ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায়। আমরা টানা শুটিং করে ছবিটি শেষ করেছি। আমি এটাকে পজেটিভলি দেখি। আমার মনে হয় টানা শুটিং হলে কাজের স্পিড থাকে, কন্টিনিউটি ঠিক থাকে। ফলে কাজটি ভালোভাবে শেষ করা যায়। এ ছবির প্রযোজক শাকিব খান থেকে শুরু করে পরিচালক মালেক আফসারী ভাই পর্যন্ত সবাই একটি টিম হয়েই আমরা কাজটি করেছি। ঈদকে সামনে রেখে যেহেতু কাজটি করা তাই সবাই টানা কাজ করে ছবিটি শেষ করার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। রিল্যাক্স হয়ে কাজ করার সুযোগটা আমাদের হয়নি।’ ঈদের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’ নিয়ে জানতে চাইলে এমনটাই বলেন শবনম বুবলী।

ছবির মূল অংশের কাজ শেষে গানের শুটিং হয়েছে তুরস্কে। এর আগে তুরস্কে বাংলাদেশের কোনো ছবির চিত্রায়ণ হয়নি। কেমন ছিলো সেখানকার অভিজ্ঞতা? উত্তরে বুবলী বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে দশজনের একটা গ্রুপ তুরস্কে গিয়েছি। ভারত থেকে এসেছে দশ-বারোজন। আবার তুরস্কের লোকাল টিম তো ছিলোই। সবমিলে ত্রিশজনের একটা টিম নিয়ে তুরস্কে আমরা কাজ করেছি। সেখানে সারাদিন কাজ করেছি, তারপর আবার রাতে জার্নি করে আরেকটা লোকেশনে চলে যেতাম। সেখানে সারাদিন কাজ করে আবার রাতে চলে যেতাম আরেকটা লোকেশনে। এভাবেই শুটিং করতে হয়েছে। তুরস্কে একটা লোকেশন থেকে আরেকটা লোকেশনে যেতে প্রায় ৮-৯ ঘণ্টা লেগে যেতো। রেস্টটাকে কমপ্রোমাইজ করে টানা কাজ করেছি। ভালো আউটপুটের জন্য সর্বোচ্চ পরিশ্রম আমরা করেছি।’

ছবিতে নিজের চরিত্রটি কিছুই বলতে চাননি বুবলী। তার ভাষায়— ‘পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা আছে। আমরা চাই সবাই হলে গিয়েই দেখুক।’ এখনকার দর্শক কনটেন্ট দেখে হলে যায়, সব লক করে রাখলে দর্শক কি শুধু নায়ক-নায়িকা দেখে হলে যাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এ নায়িকা বলেন, ‘আপনি খুব সুন্দর একটি কথা বলেছেন। এখন কনটেন্ট খুব জরুরি। অডিয়েন্স এখন বুঝে, কমপ্রেয়ার করতে পারে। তাই তারা কনটেন্ট খোঁজে। আবার কিছু ছবি থাকে হিরো বা হিরোইন বেজড। কিন্তু আমাদের এ ছবিতে প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে আমার মনে হয় দর্শক ভিন্ন কিছু দেখবে এ ছবির মাধ্যমে।’

শাকিব খান-শবনম বুবলী জুটির অষ্টম ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। বুবলী মনে করেন, প্রতিটি ছবিই তার কাছে স্পেশাল। আলাদা করে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি নিয়ে এখন কিছু বলতে চান না। কোনো প্রকার ধারণা ছাড়া যখন দর্শক একটি কাজ হলে গিয়ে দেখবে তখন তারা তাদের মতো করেই কাজটি গ্রহণ করবে। এমনটাই বিশ্বাস করেন আলোচিত এ চিত্রনায়িকা। বুবলী বলেন, ‘সব ধরনের কাজ সব দর্শকের পছন্দ হয় না। কেউ কমার্সিয়াল পছন্দ করেন, কেউ অফ-ট্র্যাক। সেদিক থেকে আমি চাই দর্শক হলে গিয়ে ছবিটি দেখুক। কারো কাছে ভালো লাগবে, কারো কাছে কম ভালো লাগবে। যাদের ভালো লাগবে তারা প্রশংসা করুক, কম ভালো লাগলে গঠনমূলক সমালোচনা করুক। কিন্তু হলে গিয়ে ছবিটি দেখুক। আমি এটাই চাই। হলে গিয়ে ছবিটি দেখলে গঠনমূলক সমালোচনা আর মন খুলে প্রশংসা দুটিই করা সম্ভব।’

‘পাসওয়ার্ড’ ছবির কিছু ফ্রেমের সঙ্গে বিদেশি ছবির মিল পাওয়া যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এগুলো নিয়ে বেশ উত্তাপ। এ বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বুবলী বলেন, ‘আমার মনে হয়, শুধু বাংলাদেশেই না, হলিউড-বলিউড বা টালিউড— ঘুরেফিরে সব জায়গার টেকনিশিয়ান নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করেছি। আমাদের ছবির গানের কোরিওগ্রাফার ছিলেন বাবা যাদব, সঙ্গে তার টিম ছিল। আবার তুরস্কে সেখানকার টিম ছিল। ওরা কিন্তু টালিউডের ছবিতেও কাজ করছে। আমার মনে হয়, কোনো কিছুর মিল কোরিওগ্রাফার, ডিরেক্টর, ড্রেস ডিরেক্টর বা আরও যারা আছেন তাদের ওপর অনেকটা ডিপেন্ড করে।

সবকিছু কিন্তু হিরো বা হিরোইনের দেখা সম্ভব না। ড্রেস বা অন্যান্য কিছু বিষয়ে সিমিলারিটি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না, থাকতেই পারে। তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো অনেকে ইচ্ছা করেই মিলানোর চেষ্টা করেন। এটা নিয়ে বসে না থেকে কাজটি দেখা উচিত। নামের মিলের ক্ষেত্রে যদি বলি, একই নামে অনেক ছবি কিন্তু হয়েছে। কিছু না কিছু হঠাৎ মিলে গেলে সেটি কিন্তু কো-ইনসিডেন্ট। এটি এমন না যে, এখান থেকে কপি করা, ওখান থেকে নেওয়া। এ ছবির নাম নিয়ে আমাদের অনেক দিনের অবজারভেশন ছিল। ফাইনালি গল্পের সঙ্গে মিলিয়েই এ নামটি ঠিক করা হয়েছে।’

যারা সমালোচনা করার তারা করবেই উল্লেখ করে বুবলী আরও বলেন, ‘আমাদের লাভারদের আমি লাভ করি, আবার হেটার্সদেরও আমি লাভ করি। কারণ সবারই হেটার্স আছে। ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ বা মিডিয়া পিপল সবারই হেটার্স আছে। হেটার্সরা কিন্তু সমালোচনা করতে গিয়ে এ ধরনের প্রচার করে ফেলেন। এটা কিন্তু অনেকেই বুঝে না।’
‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে শাকিব-বুবলীর কেমিস্ট্রি কতটুকু থাকবে? উত্তরে বুবলী হেসে বলেন, ‘এখন আর এগুলো নিয়ে মুখ খুলবো না। আমি চাই ঈদের দিন থেকে সবাই ছবিটি দেখুক। কারণ এ ছবির জন্য আমরা সবাই অনেক কষ্ট করেছি। সাংবাদিক যারা আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের খবরগুলো করছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা জানাচ্ছেন বলেই পাঠকরা জানতে পারছে। সবকিছু মিলে আমি দর্শকদের অনুরোধ করব, শাকিব-বুবলীর কেমিস্ট্রি হলে গিয়েই দেখুন।’

শাকিব খানের বাইরে বুবলী যেতে পারছে না। বিভিন্ন মহলে এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। বুবলী কি নিজে থেকেই এ গন্ডির বাইরে যেতে চাইছে না? উত্তরে শাকিব খানের এ নায়িকা বলেন, ‘এ প্রশ্নটি অনেকবার আমাকে শুনতে হয়েছে। আর প্রশ্নটি আসাই স্বাভাবিক। বিশ্বাস করেন, যতগুলো কাজ আমার কাছে এসেছে সবগুলোই শাকিব খানের বিপরীতে থাকার প্রস্তাবসহ এসেছে। আমার মনে হয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে একটি ঘরানা তৈরি হয়েছে। বাপ্পি, সাইমন, আরেফিন শুভ বা সিয়াম যারা কাজ করছে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন তাদের আলাদা একটি ঘরানা আছে। সবারই আলাদা করে একটি জুটি তৈরি হয়েছে।

ফলে তারা কাজের প্রস্তাব নিয়ে আসেন তারা ওই জুটিকে মাথায় নিয়েই আসেন। এভাবেই কিন্তু কাজ হচ্ছে। অন্য হিরোকে নিয়ে ভালো গল্পের, ভালো অ্যারেজমেন্টের কাজ আমার কাছে এসেছে কিন্তু আমি করিনি এ প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। শাকিব খানের বাইরে আমার কাছে এখন পর্যন্ত যে কাজগুলো এসেছে সেগুলো করলে অডিয়েন্সই আমার সমালোচনা করতো। ভালো গল্পের জন্যই আমি অপেক্ষা করি। আমার কাছে যে কাজগুলো আসে সবগুলোই শাকিব খানের বিপরীতে প্রস্তাবসহ আসে। বাকিগুলো আসে কিন্তু কমপ্রোমাইজ করতে আমি রাজি না বলে করি না।

শাকিব খানের সঙ্গে কিন্তু বছরে একটি বা দুটি ছবি কিন্তু আমি করি। বুবলী ছাড়া অন্য নায়িকাদের সঙ্গে শাকিব খানের অনেক ছবি আছে। শাবনূর আপু থেকে শুরু করে যদি আপনি কাউন্ট করেন তাহলে দেখবেন, অন্যান্য নায়িকাদের সঙ্গে কিন্তু শাকিব খানের অনেক ছবি আছে। সেগুলো নিয়ে কেউ কিছু বলে না কিন্তু আমরা বছরে একটি বা দুটি কাজ করি, সেগুলো নিয়েই আমাদের অনেক শুনতে হয়। কারণ আমরা রিসেন্ট কাজ করছি। আগের কাজের চেয়ে ভালো হচ্ছে বলে এখনকার কাজগুলো আলোচনা-সমালোচনা বেশি হচ্ছে। যার জন্য শাকিব-বুবলী জুটি সবার মুখে মুখে।’

কাজের সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে গুরুত্ব দেন বুবলী। যার কারণে তার কাছের সংখ্যা খুব কম। দীর্ঘালাপে এমনটাও জানান বুবলী। ঈদে মুক্তি পাওয়া বাকি ছবিগুলো প্রতি শুভ কামনা জানান এ চিত্রনায়িকা। ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি দেখে বাকিগুলো দেখার ইচ্ছা রয়েছে তার। দর্শকের প্রতি অনুরোধ করে বুবলী বলেন, ‘প্লিজ আপনারা হলে গিয়ে ছবিটি দেখুন। ভালো-মন্দ যাই হোক— আপনাদের মতামতটা গঠনমূলকভাবেই প্রকাশ করুন। ভালো লাগলে অবশ্যই মন খুলে প্রশংসা করুন, যাতে অন্যরা ছবিটি দেখতে হলে যায়। আর শেষে বলব, দর্শকরা যদি হলে গিয়ে ছবি দেখে তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে। আমরাও আপনাদের আরও ভালো কাজ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত হবো।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.