এ যাবতকালে বাংলা নাটকের সেরা জুটিগুলোকে জানেন? চমকে যাবেন
ডেস্ক রিপোর্ট : নাটক, সিনেমা বা গান- সব জায়গাতেই জুটিপ্রথা আলাদা একটা গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে রোমান্টিক নাটকে মানানসইয়ের কারণে জুটি প্রথা এই ধারায় বেশি আলোচিত হয়। একসাথে অভিনয়ের রসায়নের ফলে জুটিগুলো দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে,তাঁরা এই জুটি নিয়ে বিশেষ আগ্রহে থাকেন। অন্যদিকে নির্মাতা দর্শকপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে জনপ্রিয় জুটিকে নিয়ে নাটক তৈরি করতে তৎপর থাকেন, অভিনয়শিল্পীরাও নিজেদের জুটির উপর আলাদা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বাংলা নাটকের জুটিপ্রথা নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন:
বাংলা নাটকের চিরসবুজ জুটি বলা হয় আফজাল হোসেন-সুবর্ণা মুস্তফা জুটিকে,অনেকের মতে এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি। আশির দশকে এই দুইজন নিজেদের গভীর রসায়নে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখতেন। একের পর এক রোমান্টিক নাটকে অভিনয় করে নিজেদের নিয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষস্থানে। দর্শকরা এই জুটির উপর এতটাই মোহে ছিলেন যে, অনেকেই উনাদের বাস্তবের জুটি ভাবতেন। এই জুটির পারলে না রুমকি, কূল নাই কিনার নাই, নিলয় না জানি নাটকগুলো অন্যতম। আফজাল-সুবর্ণার বিশাল জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সেই সময়ে আল মনসুর-মিতা চৌধুরী জুটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এছাড়া হুমায়ূন ফরিদী-সুবর্ণা মুস্তফা, খালেদ খান-শম্পা রেজা জুটিও মোটামুটি জনপ্রিয় হয়েছিল।
জুটিপ্রথা আরো আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠে নব্বই দশকে এসে। একঝাঁক উদীয়মান শিল্পীর আগমন, প্যাকেজ নাটক নির্মাণ শুরু হওয়ার কারনে নাটকের সংখ্যাও দিনদিন বেড়েছে। নব্বইয়ের দুই সেরা তারকা জাহিদ হাসান-বিপাশা হায়াত জুটি জনপ্রিয় হতেই না হতেই অজানা কারনে ভেঙ্গে যায়। দুইজনই আলাদা করে জুটি বেঁধে সফল হন। বিশেষ করে তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত জুটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়, পর্দার বাইরে বাস্তবেও জুটি বাঁধায় এই জুটি আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠে। এই জুটির উল্লেখযোগ্য নাটক আশিক সব পারে, রুপনগর অন্যতম। অন্যদিকে জাহিদ হাসান জুটি বাঁধেন শমী কায়সারের সঙ্গে, এই জুটিও ভীষন জনপ্রিয়। এই দুই জুটির সঙ্গে আজিজুল হাকিম-আফসানা মিমি জুটি পাল্লা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
তবে এরা এক জুটিতেই আবদ্ধ থাকতেন না। পর্দায় তৌকীর- শমী,জাহিদ-মিমি, সেলিম-মিমি, হাকিম-রাত্রি, টনি ডায়েস-মিমি জুটি হয়ে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হয়েছেন। তখন যে শুধু মূল অভিনয় শিল্পীরা জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন তা নয়, বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনয়শিল্পীরাও জনপ্রিয় হয়েছিলেন জুটি বেঁধে। উদাহরণ হিসেবে পাই আবুল হায়াতের সঙ্গে দিলারা জামান, শর্মেলী আহমেদ ও ডলিজহুরের জুটি বেঁধে অনেক নাটকে অভিনয়। এছাড়া জব্বার আলী সিরিজে আমজাদ হোসেন-জাহানারা ভূঁইয়া জুটিও দর্শকনন্দিত হয়েছিল। শুধুমাত্র তখন কোথাও কেউ নেই- এর সুবাদে আসাদুজ্জামান নূর-সুবর্ণা মুস্তফা জুটি নতুন করে প্রচুর আলোচিত হয়েছিল।
গত দশকে জুটিপ্রথাকে এক অভিনব জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন রোমান্টিক অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীর সাথে তিনি জুটি বেঁধে সফল হন। এর মধ্যে সবচেয়ে সফল মাহফুজ-তারিন জুটি, বলা যায় নাটকের ইতিহাসে এই জুটি সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটির তালিকায় প্রথমদিকে থাকবে। এই জুটির উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে দেবদাস, কথা ছিল অন্যরকম, রাত্রির ফুল অন্যতম। একই সময়ে ‘৫১ বর্তী’ খ্যাত মাহফুজ-অপি করিম জুটিও দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই জুটির প্রায় সব নাটক ই নন্দিত হয়েছে,এর মধ্যে এই বৈশাখে, বালক বালিকা, বালিঘর অন্যতম। এছাড়া মাহফুজ- শ্রাবন্তী, জয়া থেকে তিশার সঙ্গেও জুটি তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
এই দশকে জাহিদ হাসান অভিনয় করতে থাকেন তারিন, অপি, জয়া, রিচিদের সাথে। অন্যদিকে তারিন জুটি গড়ে তুলেছিলেন অপূর্বর সাথে, সংখ্যায় কম হলেও পার্থ বড়ুয়া-অপি করিম জুটিও বেশ আলোচিত। এছাড়া এই সময়ে জয়-দীপা খন্দকার, মীর সাব্বির-ঈশিতা, আজিজুল হাকিম-তানিয়া আহমেদ জুটিগুলো কমবেশি আলোচনায় ছিল। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করে এজাজুল ইসলাম-শামীমা নাজনীন জুটিও দর্শকনন্দিত হয়েছিল,এখনো তাঁরা অভিনয় করে যাচ্ছেন। শাওন শুধুমাত্র হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করতেন, ঐ নাটকগুলোতে রিয়াজ, মাহফুজদের সাথে জুটি গড়ে উঠেছিল।
মোশাররফ করিম রোমান্টিক নাটক খুব কম করতেন বলে জুটিপ্রথা অত আলোচনায় আসতো না। তবুও এর মাঝে সুমাইয়া শিমু ও তিশা সহ-অভিনেত্রী হলে দর্শকদের আগ্রহের মাত্রা আরো বেড়ে যেত। গত কয়েকবছর ধরে তিনি নিজের স্ত্রী রোবেনা জুঁইকে নাটকে নিয়ে এসে জুটি বেঁধেছেন,তবে এই জুটিকে জনপ্রিয় বলা যায় না।চঞ্চল চৌধুরীর অবশ্য সেভাবে কারোসাথেই সেভাবে জনপ্রিয় জুটি গড়ে উঠেনি।অভিনেত্রীদের মধ্যে তিশাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি জুটি গড়ে উঠেছিল। শেষ প্রান্তে খ্যাত অপূর্ব-তিশা জুটি হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়ার পর এখনো কোন নির্মাতা একসাথে পর্দা ভাগ করাতে পারেন নি।
তবে তিশা-তাহসানের জুটি এই দশকে দারুন আলোচিত হয়েছিল। তাহসান-তিশা জুটির মনফড়িঙের গল্প, মনসুবা জংশন, টু এয়ারপোর্ট, এংরি বার্ড নাটকগুলো জনপ্রিয় হয়েছিল। গ্র্যাজুয়েট ও আরমান ভাই সিরিজের সুবাদে জাহিদ হাসান-তিশা জুটিও বেশ আলোচিত হয়েছিল। এক সময়ের বাস্তবের জুটি তাহসান-মিথিলা ও নাট্যজুটিতে দর্শকদের আগ্রহের তালিকায় ছিল। এছাড়া নিশো-তিশা, সজল-তিশা, শুভ-বিন্দু, হিল্লোল-তিন্নি, অপূর্ব-প্রভা জুটিগুলো অন্যতম।
এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি বড় ছেলে খ্যাত ‘অপূর্ব- মেহজাবীন’ জুটি। বিশাল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই নাটকের পর এই জুটি চুটিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, সংখ্যার দিক থেকেও রেকর্ড করে ফেলেছেন। অন্যদিকে আফরান নিশো-তানজিন তিশা জুটিও যেন তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে যাচ্ছে। এছাড়া নিশো-মেহজাবীন বা অপূর্ব-মম জুটিতো আছেই। ইদানীংকালে আলোচনায় আছে জোভান-মেহজাবীন, তৌসিফ-সাফা, মনোজ-নাবিলা সহ কিছু জুটি।
জুটিগুলোর এত এত নাটকের ফলে দর্শকদের মাঝে একঘেয়েমির প্রবণতা চলে এসেছে।যেখানে আগে জনপ্রিয় জুটির নাটক দেখার জন্য আগ্রহে থাকতো সেখানে দর্শকরাই বলছেন জনপ্রিয় জুটির একচেটিয়া কাজ গুলো থেকে যেন বিরতি নেয়া হোক। এইক্ষেত্রে নাটক দেখা সহজলভ্যতাও একটা কারণ। আগে নাটক নির্মিত হতো কম, প্রতিদিন ধারাবাহিক নাটক দেখলেও প্যাকেজ নাটক, টেলিছবি বেশিরভাগ দেখা হত উৎসবে। স্বাভাবিক ভাবেই একঘেয়েমি আসতো না। কিন্থ এখন চাইলেই দর্শকরা প্রতিদিন অধিক সংখ্যক নাটক দেখতে পারছে। নাটক প্রচারের মাধ্যম বেড়েছে, সংখ্যা বেড়েছে- এটা অবশ্যই ভালো দিক তবে সে অনুযায়ী মান বাড়েনি। তাই এই একঘেয়েমিটা বেশি চোখে পড়ছে। নির্মাতা, প্রযোজকরাও নিজেদের ঝুঁকি এড়াতে জনপ্রিয় জুটি গুলো নিয়ে কাজ করে যেতে চান, খুব কম নির্মাতাই ঝুঁকি নেন।
জুটিপ্রথা থাকুক, সেটার দরকারও আছে। তবে অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা আর এখন বিশেষ করে প্রযোজকদের বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত যেন এই জনপ্রিয় জুটিগুলো বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, একটু বিরতি দিলেই জুটিগুলো থাকবে দর্শকদের আগ্রহের তালিকায়। এখনো যখন পুরানো জুটিগুলো আবার মাঝেমধ্যে অভিনয়ে ফিরে আসে, তখন দর্শকরাই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়, অপেক্ষায় থাকে সেই আকাঙ্ক্ষিত জুটির নাটকের…
এগিয়ে-চলো