প্রসূতির রোজা

লাইফস্টাইল ট্যাংক : অন্য সকল সময়ের মতনই প্রসূতি কালেও রোজা রাখা যেতে পারে – এই তথ্যটি দিয়েই শুরু করবো আজকের লেখাটি। অনেক সময় আমরা মনে করি যে যেহেতু মাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, রোজা রাখলে হয়তো তার বুকে দুধ কম আসতে পারে।

অন্যদিকে মায়ের স্বাস্থ্যের কথাও অনেকে চিন্তা করে থাকে। শিশুর পুষ্টি, জীবনধারণ এবং বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুধ শিশু জন্মের ছয় মাসে শুধু প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে না বরং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক টিকা হিসেবে কাজ করে। শিশুর বয়স বাড়ার পরেও মায়ের দুধ বিভিন্ন রোগ থেকে তাকে মুক্ত রাখে। মায়ের দুধ খেলে শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়, ফলে শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যালার্জি, ইত্যাদি কম হয়। এছাড়া রোগ হলেও এদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে এরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। এসব কথা চিন্তা করে অনেকেই রোজার অসময় প্রসূতি মাকে রোজা রাখতে বারণ করে থাকেন কিংবা রমজান মাসে প্রসূতি মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি রোজা রাখার জন্য দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। সকল বিষয় লক্ষ্য করে প্রসূতি মায়েদের বেলায় রোজা রাখার জন্য চিকিৎসকের মতামত প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, রোজা রাখার জন্য রমজানের সেহরি, ইফতার, সন্ধ্যারাত তিন বেলায় পর্যাপ্ত সুষম খাবারের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। যদি প্রসূতি মায়ের অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে সাধারণভাবে তাদের ইফতারের শুরুতেই পর্যাপ্ত তরলজাতীয় খাবারের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়। ইফতারের আয়োজনে কলিজা সিঙাড়া, কাবাব, ডিম, লাচ্ছি রাখা যেতে পারে। খেজুরসহযোগে ইফতার করলে প্রয়োজনীয় লৌহের চাহিদা মেটে। প্রসূতি মায়ের বেলায় বুকের দুধ বাড়াতে তরলজাতীয় খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম, ইফতারে এ জন্য পানি ছাড়াও স্যুপ, ঝোল, ডাল, শরবত, সাগু ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। দৈনিক খাবার তালিকায় আমিষজাতীয় অথবা প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি থাকতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল থেকে আমিষজাতীয় খাদ্যের উপাদান পাওয়া যাবে। বুকের দুধে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের উপস্থিতির জন্য খেতে হবে সবুজ শাকসবজি, দই, পনির, বাদাম, কমলা, কলা, আঙুর, আপেল ইত্যাদি।

03এসব কিছুর মাঝে মনে রাখতে হবে সব সময় নবজাতকের ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। নবজাতক ঠিক মতন বুকের দুধ পেলে রোজা রাখা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আসুন তবে জেনে নেই কিভাবে বুঝবেন নবজাতক ঠিক মতন বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা। খেয়াল করুন যে শিশুটি শিশুটি দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টায় ৮-১২ বার বুকের দুধ পান করছে কিনা। দেখুন নবজাতকটি দৈনিক ছয়বারের বেশি প্রস্রাব করছে কিনা, শিশুটি দৈনিক চারবার আঠালো মল ত্যাগ করছে কিনা। কিছু দিন পর পর মেপে দেখুন শিশুটির ওজন বাড়ার গতি ঠিক থাকছে কিনা। উপরোক্ত বিষয়গুলোর আলোকে শিশুটির প্রস্রাব, পায়খানা, বৃদ্ধি, স্বাভাবিক থাকলে তাহলে বলা যেতে পারে শিশুটি পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে। পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাওয়া গেলে প্রসূতি মায়ের রোজা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু পর্যাপ্ত বুকের দুধের অভাবে শিশু যদি দুর্বল, ক্লান্ত, অসুস্থ হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে প্রসূতি রোজা ছেড়ে দিয়ে পরবর্তী সময়ে তা আদায় করে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, রোজা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য যেমন-শর্করা, চর্বি, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি আনুপাতিক হারে গ্রহণ করতে হবে। কেননা প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলেই মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা পায় এবং নবজাতকের বৃদ্ধির গতি স্বাভাবিক থাকে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.