275029

অশ্লীল বার্তা পরীমণির হাতের তালুতে, পর্ণগ্রাফি আইনে যে অপরাধ ও শাস্তি

শিশু-কিশোরদের গণ্ডি ছোট থাকে।  চোখের সামনে তারা যা দেখে অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে।  তারা যাকে পছন্দ করে, তার আচার-আচরণ অনুসরণ ও অনুকরণ দুটোই করে।  বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে জড়িয়েই বড় হচ্ছে শিশু-কিশোররা।  তারা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে পটু, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের দৃষ্টি থাকতে দেখা যাচ্ছে।  এমন একটি স্পর্শকাতর সময়েই হাতের তালুতে মেহেদি দিয়ে আঁকা ‘মিডল ফিঙ্গার’ প্রদর্শন করে ভয়াবহ অশ্লীলতার ইঙ্গিত দিলেন নায়িকা পরীমণি।  যা নিয়ে নানান মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

শিশু-কিশোররা বয়জ্যেষ্ঠ কাউকে কিছু করতে দেখে সেটি শিখে তা নিজেও প্রদর্শন করলে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন দেশের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকরা।  তাছাড়া পরীমণি একজন নায়িকা হিসেবে, তিনি ‘পাবলিক ফিগারও’ বটে!  তার এমন আচরণের প্রভাবে শিশু-কিশোররা অসময়ে যৌন আচরণ প্রদর্শন করার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  যা আমাদের আন্ত:সামাজিক ও কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে কোনভাবেই যায় না।

বিজ্ঞজনরা বলছেন, দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পীর এমন আচরণে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে শিশু-কিশোররা।

তাই সেলিব্রেটি হিসেবে পরীমণিকে সতর্ক করে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে মতামত দিয়েছেন বিজ্ঞজনরা।

এদিকে পরীমণি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘Pori Moni’ তে আজ বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১ টা ২১ মিনিটে এটি ছবি আপলোড দেন।  যেটিতেও সেই অশ্লীল সিম্বল অঙ্কিত হাতের তালু প্রদর্শন করা অবস্থায় দেখা গেছে।  আপলোড করা ওই পোস্টে রাত ৯ টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৮০ হাজারেরও বেশি নেটিজেনকে রিএ্যাক্ট দিতে দেখা গেছে।  এছাড়াও পোস্টটি শেয়ার করেছেন ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ।

এবারের বার্তাটি প্রসঙ্গে আজ বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পরীমণির সঙ্গে কথা হয় দেশের প্রথম সারির একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের।  ওই পোর্টালটির প্রতিবেদককে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরীমণি বলেছেন, “আমার কষ্ট লাগছে এখন।  অনেকেই আমার বার্তাটি ঠিক বুঝতে পারছেন না, ভুল বুঝছেন।  সবাই ভাবছেন আমি লিখেছি ‘লাভ মি মোর’।  আসলে তো আমি লিখেছি ‘…ক (গালি) মি মোর’।’’

কিন্তু কেন এই বার্তা? এখন তো সবই আপনার অনুকূলে। কার উদ্দেশে এটি বলেছেন? জবাবে পরীমণি বলেন, ‘যারা আমার জীবন নিয়ে খেলতে চায় বা ঘাটতে আসে, তাদের সবাইকে আমি ওয়েলকাম করছি। আসো।  ওয়েলকাম।  আমি প্রস্তুত তোমাদের সঙ্গে এই খেলায় অংশ নিতে।  দম যতদিন আছে, আমি শেষ অবধি এই খেলায় লড়ে যাবো।’

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে  আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত “আইবিএ প্রোবোনো অ্যাওয়ার্ড, ২০২০” অর্জনকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন।  “পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ সালের ২ এর ‘গ’ উপধারায় ‘পর্নোগ্রাফি’ এর সজ্ঞায় বলা হয়েছে- ‘যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরণের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একই আইনের ৮ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে- ‘কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।  পর্নোগ্রাফি আইনের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য অর্থাৎ জামিনযোগ্য নয়।’

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘এখানে নায়িকা পরীমণি পর্নোগ্রাফি আইনের ‘গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই’ সজ্ঞামতে অপরাধ করেছেন বলে মনে করছি।  তবে কেউ এ বিষয়ে থানায় কিংবা আদালতে অভিযোগ না করলে আইনের প্রয়োগ বিচার পর্যন্ত গড়াবে কেমন করে?

পাঠকের মতামত

Comments are closed.