271321

চাকরির লিখিত পরীক্ষা না দিয়েই ডাক পেলেন মৌখিকে

ডেস্ক রিপোর্ট: যেকোনো চাকরির লিখিত পরীক্ষার মঞ্চ টপকাতে প্রার্থীকে হতে হয় গলদঘর্ম। আর তা যদি হয় সরকারি চাকরি, সেখানে তো আরো যুদ্ধ, আরো লড়াই। লিখিত পরীক্ষার বাধা ডিঙাতে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিন-রাত প্রস্তুতি নেন অনেক প্রার্থী। তবে লিখিত পরীক্ষায় না বসেই মৌখিকে ডাক পড়লে সেই প্রার্থীকে ‘ভাগ্যবান’ বলতেই হয়!

অবিশ্বাস্য ঠেকলেও এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে সরকারি এক নিয়োগ পরীক্ষায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অস্থায়ী রাজস্ব) পদের লিখিত পরীক্ষায় ঘটে এ ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তোলপাড় চলছে।

সূত্র জানায়, বিএফআরআইয়ে ৪২টি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অস্থায়ী রাজস্ব) পদের জন্য গত শনিবার লিখিত পরীক্ষায় বসেন প্রার্থীরা। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ৬০ নম্বরের এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট দুই হাজার ৮২০ জন প্রার্থী আবেদন করলেও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন এক হাজার ২১৪ জন।

গতকাল রবিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১২৭ জনকে নির্বাচিত করে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২১৯০ রোল নম্বরের প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ না নিলেও তাঁকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। গতকাল বিকেল ৫টায় রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ভবনে সাক্ষাৎকারের জন্য ওই প্রার্থীকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। প্রকাশিত তালিকায় ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এবং নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি-২-এর সদস্যসচিব ড. মো. খলিলুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।

লিখিত পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও যে প্রার্থী মৌখিকের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর বাড়ি বগুড়ায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রী। গতকাল বিকেল ৫টায় তাঁকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হলেও তিনি ওই সময় বগুড়াতেই অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বিকেলে ওই প্রার্থী জানান, পরীক্ষা দিয়ে কোনো লাভ হয় না, তাই পরীক্ষা দিতে আসিনি। তবে গত রাতে আবার ওই প্রার্থীকে ফোন দিলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সূত্র জানায়, লিখিত পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মৌখিকে নাম আসার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সাইফ নামে বিএফআরআইয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল হুমকি দিয়ে ওই প্রার্থীকে জানান, তিনি যেহেতু পরীক্ষায় অংশ নেননি, তাই তিনি যেন মৌখিক পরীক্ষা দিতে না আসেন।

লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মিরাজুল নামের এক প্রার্থী বলেন, ‘আমার রোল নম্বর ২১৯১। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমার পরের রোল নম্বরটি দেখে অবাক হই। কারণ সে আমার বান্ধবী এবং সে পরীক্ষা দেবে না, সেটা আগে থেকেই জানিয়েছে। এর পরও আমি তাকে ফোন দিলে সে নিজেই অবাক হয়। এরপর বিএফআরআই কর্তৃপক্ষকে জানালে বিষয়টি গোপন রাখতে তারা দুজনকেই চাপ দেয়।’

পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া আরেক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিএফআরআইয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়ে লাভ হয় না। পরীক্ষা এখানে শুধু আইওয়াশ। যাদের নেওয়া হয় আগে থেকেই তাদের ঠিক করা থাকে। বিষয়টা এখন অনেকটাই ওপনে সিক্রেট। আগেও এমনই হয়েছে। তাই আমরা পরীক্ষা দিতে যাই না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএফআরআইয়ে পরীক্ষার খাতায় কোডিং করা হয়। তাই যাঁরা খাতা মূল্যায়ন করেন তাঁরা বুঝতে পারেন না খাতাটি কার। তবে যাঁরা খাতা কোডিংয়ের সঙ্গে জড়িত শুধু তাঁরাই প্রার্থীদের শনাক্ত করতে পারেন। এমনকি খাতার ভেতরের পৃষ্ঠা ওলটপালটের সুযোগও তাঁদের রয়েছে। ফলে অনেকে ভালো পরীক্ষা দিয়েও মৌখিকের জন্য নির্বাচিত হন না। আবার অনেক অযোগ্যরাও নানা ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে চাকরি পেয়ে যান।

এ ব্যাপারে বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘যাঁরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মৌখিকের সময় তাঁদের হাতের লেখা, চেহারা আমরা মিলিয়ে দেখছি। হয়তো একজন প্রার্থী আরেকজনের রোল নম্বর লিখে দিয়েছে বলেই এমনটা ঘটেছে। তবে নিয়োগ পরীক্ষায় যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তা আমরা খতিয়ে দেখব। অবশ্যই তা সংশোধন করা হবে।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.