271268

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় নতুন ওষুধে বাংলাদেশের সাফল্য

ডেস্ক রিপোর্ট: ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ‘অ্যালট্রোমবোপাগ’ নামের নতুন একটি ওষুধ প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশি একদল গবেষক। ১০১ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। তাদের প্রত্যেককে ২৫ মিলিগ্রাম করে ওষুধটি দেয়া হয়েছিল।বাংলাদেশের ১২জন গবেষক ও চিকিৎসকের সমন্বয়ে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি চিকিৎসা সাময়িকী দ্যা ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের অর্থায়নে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।গবেষকদের একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সজীব চক্রবর্তী বলেন, ডেঙ্গু রোগের একটি অন্যতম উপসর্গ হলো এতে রক্তের প্লেটলেট কমে যায়। কিন্তু অ্যালট্রোমবোপ্যাগ নামের একটা ওষুধ রয়েছে যা রক্তের প্লেটলেট বাড়ায়, কিন্তু ডেঙ্গু রোগে এটি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। তাহলে এই রোগের চিকিৎসায় সেটা কতটা কাজ করতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতেও যেহেতু প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, তাই আমরা ধারণা করছিলাম যে, এই ওষুধটি সেখানেও কাজ করতে পারে। কিন্তু আমরা শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম না। তখন আমরা এটা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে শুরু করি। সেখানে আমরা যে ফলাফল দেখতে পেয়েছি, তাতে যে ডেঙ্গু রোগীরা এই ওষুধটি খেয়েছেন, আট দিনের মাথায় তাদের প্রায় ৯২ শতাংশ রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো। আর যাদের ওষুধটি দেয়া হয়নি, তাদের মধ্যে মাত্র ৫৫ শতাংশের সেটা ঠিক হয়েছিল। ফলে এতে বোঝা যায়, এই ওষুধটি দিলে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।
‘সেই সঙ্গে এই ওষুধটির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা, সেটাও আমরা দেখেছি। কারণ অনেকের পেল্টলেট বেড়ে গেলে সেটা ক্ষতির কারণও হতে পারে। অনেক সময় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কিন্তু রোগীদের ক্ষেত্রে (এই ওষুধে) এরকম কিছু পাইনি। শুধু তিন শতাংশের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পেয়েছি।”

২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই গবেষণাটি করা হয়। তবে এখনো ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার অনুমোদিত নয়।ড. চক্রবর্তী জানান, এটি ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি পরীক্ষা। তবে ডেঙ্গু রোগের ওপর এই ওষুধের সাফল্যের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হলে একাধিক দেশে কয়েক হাজার মানুষের ওপর তৃতীয় ধাপের মানব পর্যায়ের পরীক্ষা করা জরুরি।

তিনি বলেন, এখনো এটা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে আসেনি। কিন্তু আমাদের মতো আরও বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা করে সফলতা পাওয়া গেলে তখন নিশ্চয়ই এটা ডেঙ্গুর চিকিৎসার গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত হবে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। গবেষকরা আশা করছেন, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ও সফল ওষুধ শনাক্ত করা গেলে এই অঞ্চলের অনেক মানুষ উপকৃত হবে।
আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস ২০০৮ সালে এই ওষুধ অ্যালট্রোমবোপ্যাগ তৈরি করে যা আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা FDAএর অনুমোদন লাভ করে ২০১৪ সনে। অন্যান্য ব্যাধি যেমন, লিভারের রোগে যখন প্লেটলেট কমে যায়, তখন এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

সূত্র: মানবকণ্ঠ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.