267493

ডেঙ্গু ছাড়াও এই সময় হতে পারে মশাবাহী ছয় রোগ!

বর্ষাকাল মানেই মশার বংশবৃদ্ধি! এই সময় যেখানে সেখানে পানি জমে আর মশা সেখানে লার্ভা ছাড়ে। যার থেকে জন্ম নেয় হাজারো মশা। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় মশার উপদ্রবও বাড়ে। আর মশার কামড়ে শুধু ডেঙ্গু নয় হতে পারে চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ নানান রোগ।

একে তো করোনাভাইরাস মহামারি চলছে তার উপরে যদি মশাবাহিত রোগও বাড়ে সেক্ষেত্রে বিপদ বাড়বে। এজন্য এই সময় এর থেকে দূরে থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। এই সময় হতে পারে মশাবাহী ছয়টি রোগ। সে সম্পর্কে জেনে নিন এবং সাবধানতা অবলম্বণ করুন।

এনকেফালাইটিস

‘কিউলেক্স’ নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ। যার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি এশিয়া মহাদেশে, বিশেষত জাপানে। এর উপসর্গ হল জ্বর ও মাথাব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের দেখা দেয় খিঁচুনি, মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং প্যারালাইসিস বা অসাড়তা। টিকাই এই রোগের সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

জিকা ভাইরাস

এই রোগের বাহক মশার বৈজ্ঞানিক নাম ‘এইডেস অ্যালবোপিকটাস’। ‘এশিয়ান টাইগার মসকুইটো’ নামেও এর পরিচিতি আছে লোকমুখে। জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, অবসাদ এবং পেশিতে ব্যথা। গর্ভবতী কোনো নারী এই ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হলে, মায়ের কাছ থেকে সন্তানের মাঝেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে জিকা ভাইরাস। সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সবসময় ফুল শার্ট ও প্যান্ট পরতে হবে। মশারি ব্যবহার করতে হবে, ‘মসকুইটো রেপেলেন্ট’ ব্যবহার করতে হবে। মোট কথা, মশার কামড় থেকে দূরে থাকতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কতটুকু তা গতবছর বর্ষাকালে সবাই দেখেছি। ‘এডিস অ্যাজিপ্টাই’ মশার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে। সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর রোগের উপসর্গ দেখা দিতে তিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। উপসর্গগুলো ‘ফ্লু’ বা মৌসুমি সর্দিজ্বরের মতো, যা আবার কয়েকদিন পরেই ভালো হয়ে যায়। এই রোগ থেকে বাঁচতেও করণীয় একই, মশা থেকে বাঁচতে হবে।

পীতজ্বর

‘ইয়েলো ফিভার’ নামে পরিচিত এই রোগের বাহকও ‘এডিস অ্যাজিপ্টাই’। যার প্রাদুর্ভাব মূলত আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি। জ্বর, মাথাব্যথা, জন্ডিস, পেশি ব্যথা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ প্রধান উপসর্গ। সংক্রমণের চার থেকে সাত দিনের মধ্যেই রোগ সেরে যায়। তবে কিছু রোগীকে নাক, মুখ ও পাকস্থলির রক্তপাতে ভুগতে দেখা যায়। যেসব দেশে এই রোগের প্রকোপ আছে সেখানে যাওয়ার আগে এর টিকা নিতে হবে।

চিকনগুনিয়া

এই রোগের ভয়ানক প্রকোপ এদেশে খুব বেশিদিন পুরনো নয়। মশার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশের দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ চোখে পড়া শুরু হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, ত্বকের র‌্যাশ, বমিভাব ও বমি ইত্যাদি ছাড়াও শরীর ব্যথা। বিশেষত, হাড়ের জোড়ে ব্যথা হওয়া এর বিশেষ লক্ষণ। রোগ সেরে যাওয়ার পরও এই জোড়ের ব্যথা সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরব্যাপী ভোগাতে পারে। আর এই রোগের বাহকও ওই ‘এডিস অ্যাজিপ্টাই’ মশা।

ম্যালেরিয়া

স্ত্রী ‘অ্যানোফিলিস’ মশা মানবদেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে থাকা পরজীবী জীবাণু প্রথমে মশাকে আক্রান্ত করে। পরে ওই মশা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তার শরীরেও জীবাণু প্রবেশ করে। উপসর্গের মধ্যে আছে জ্বর, কাপুনি, মাথাব্যথা।

সঠিক সময়ে এই রোগগুলোর চিকিৎসা করা না হলে প্রায় সবগুলোই প্রাণঘাতি হওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচতে অ্যারোসল, মশারি, কয়েল, ধুপ, ‘মসকুইটো রেপেলেন্ট’ ইত্যাদি সাধ্য অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। মশার বংশবিস্তার হতে পারে এমন স্থান ধ্বংস করতে হবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.